মুহাম্মদ (সাঃ) সৃষ্টি সম্পর্কিত প্রচলিত কিছু ভুয়া ও জাল হাদীস

(১) আপনি (মুহাম্মদ) যদি না হতেন, তাহলে আমি আকাশ ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করতাম না।
অথবা যাকে সৃষ্টি না করা হলে আসমান – যমীন কিছুই সৃষ্টি করা হত না।

সনদঃ এটি একটি জাল হাদীস। ইবনুল জাওযী তার “আল মাওযু’আত” গ্রন্থে (১/২৮৮-২৮৯) হাদিসটি বিশ্লেষণ করে বলেছেন হাদীসটি বানোয়াট। সুয়ুতী “আল লা’আলী’ গ্রন্থেও (১/২৭২) একই মত প্রকাশ পেয়েছে। আলাম্মা সাগানী তার “আল-মাওসু’আত” গ্রন্থের ৫২ নং পৃষ্ঠায় , হানাফী মাজহাবের বিখ্যাত আলেম ও তিরমিযীর ভাষ্যকার মোল্লা আলী কারী তার “আল-আসরার” গ্রন্থের ১৯৪ পৃঃ ; আল-মাসনু গ্রন্থের ১১৬ নং পৃঃ ; আল-আজলুনী , কাশফুল খাফা গ্রন্থের ২/২১৪ পৃঃ ; ইমাম শাওকানী (রহঃ) এর “আল-ফাওয়াইদ গ্রন্থের ২/৪৪১ পৃঃ ; হানাফী মাজহাবের আরেক বিখ্যাত আলেম আব্দুল হাই লাখনবী তার আল-আসারুল মারফুয়া গ্রন্থের ৪৪ পৃঃ ও অন্যান্য মুহাদ্দিস একবাক্যে কথাটিকে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। এছারাও অনেক হাদীস বিশেষজ্ঞ ও মুহাদ্দিস হাদিসটিকে জাল বলেছেন।

(২) আদম (আঃ) যখন গন্ধম ফল খেয়ে গুনাহ করে ফেললেন, তিনি বললেনঃ হে আমার প্রভু। তোমার নিকট মুহাম্মদকে সত্য জেনে প্রার্থনা করছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আল্লাহ্‌ বললেনঃ হে আদম! তুমি কিভাবে মুহাম্মদকে চিনলে অথচ আমি তাকে সৃষ্টি করিনি? আদম বললেনঃ হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে যখন আপনার হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছিলেন এবং আমার মধ্যে আপনার আত্মা থেকে আত্মার প্রবেশ ঘটান, তখন আমি আমার মাথা উচু করেছিলাম। অতঃপর আমি আরশের স্তম্ভগুলোতে লিখা দেখেছিলাম লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ। আমি জেনেছি যে, আপনার কাছে সর্বাপেক্ষা ভালোবাসার সৃষ্টি ব্যতীত অন্য কাউকে আপনি আপনার নামের সাথে সম্পৃক্ত করবেন না………… আল্লাহ্‌ বলেনঃ সত্যি বলেছ , মুহাম্মদ যদি না হত আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না , অথবা তাকে সৃষ্টি না করা হলে আসমান – যমীন কিছুই সৃষ্টি করা হত না।

সনদঃ এটাও একটা জাল হাদীস। ইমাম যাহাবী (রহঃ) তার ‘মীযানুল ই’তিদাল” গ্রন্থে বলেন হাদীসটি বাতিল ও বানোয়াট। ইমাম বায়হাকীও (রহঃ) একই মত পোষণ করেছেন। ইবনু কাসীর (রঃ) তার “আত-তারীখ” গ্রন্থে (২/৩২৩) হাদিসটি যে বাতিল ও বানোয়াট তা সমর্থন করেন। হাদীসগ্রন্থ বুলুগুল মারাম এর সংকলক হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) তার “আল-লিসান” গ্রন্থে বলেছেন হাদীসটি বাতিল। ইবনু ইরাক, তানযীহুশ শারীয়াহ গ্রন্থের ১/২৫০ পৃঃ ও আলবানী (রহঃ) এর সিলসিলাতুল যায়ীফাহ গ্রন্থের ১/৯০ পৃষ্ঠাতেও জাল বলে উল্লেখ আছে। তাবারানী এর আল-মুজামুল আউসাত গ্রন্থের ৬/৩১৩-৩১৪ পৃঃ ; আল-মুজামুস সাগীর গ্রন্থের ২/১৮২ পৃঃ ; মুসতাদরাক হাকিম গ্রন্থের ২/৬৭২ পৃঃ ; মাজমাউয যাওয়াইদ এর ৮/২৫৩ পৃঃ খাল্লাল, আস-সুন্নাহ এর ১/২৩৭ পৃঃ ; আল-আজলূনী, কাশফুল খাফা গ্রন্থের ১/৪৬ ও ২/২১৪ পৃঃ ; , হানাফী মাজহাবের বিখ্যাত আলেম ও তিরমিযীর ভাষ্যকার মোল্লা আলী কারী তার “আল-আসরার” গ্রন্থের ১৯৪ পৃঃ ; আল-মাসনূ গ্রন্থের ১১৬ পৃঃ ; দাইলামী এর আল-ফিরদাউস গ্রন্থের ৫/২২৭ পৃষ্ঠা সহ অনেক জায়গায় একে জাল বলে উল্লেখিত আছে। এছাড়াও ইমাম তাহাবী , ইমাম ইবনু হিব্বান (রহঃ) , ইমাম হাকিম (রহঃ) , ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) , ইমাম ইবনুল যাওযী (রহঃ) , ইবনুল মাদানী , ইবনুল সা’দ ও আবু নুয়াইমও একই মত পোষণ করেছেন অর্থাৎ হাদিসটি জাল , বানোয়াট ও পরিত্যাজ্য। মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) একে জাল বলেছেন। মোটকথা নবী (সাঃ) হতে হাদিসটির কোন ভিত্তিই নেই সুতরাং এটা একটা ভিত্তিহীন হাদীস।

Leave a comment