ডা. জাকির নায়েকের সমালোচনা ও বাস্তবতা

একজন মু’মিন মুসলিমের জন্য অত্যন্ত আবশ্যকীয় বিষয় হলো অপর কোন মুমিন, মুসলিম ভাইয়ের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করার আগে বিষয়টি যাচাই করে নেয়া। এ নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা। পবিত্র কুরআনে তিনি ইরশাদ করেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ.

অর্থ: “হে ঈমানদ্বার গণ! যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে (সে ব্যাপারে কিছু বলা বা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে) তোমরা তা যাচাই করে নাও। না হলে, তোমরা অজ্ঞতাবশত: কোন কওমকে আক্রমণ করে বসবে, অবশেষে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।” (সূরা হুজুরাত, আয়াত: ০৬)

এই আয়াতের দ্বারা এটা সুস্পষ্ট যে, কেবল মাত্র ধারণা প্রসূত এবং তৃতীয় পক্ষের কোন কথা শুনেই কারো সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেয়া উচিত নয়। কোন মন্তব্য করাও ঠিক নয়। কারণ অনেক সময়ই মাধ্যম বাড়ার কারণে মূল বিষয় পরিবর্তিত হয়ে যায়। একারণেই যে কোন বক্তব্যের ক্ষেত্রে বা কারো সমালোচনার ক্ষেত্রে সরাসরি তার সাথে কথা বলা, সুনির্দিষ্টভাবে তার আলোচনা উদ্ধৃত করা কিংবা তার লেখা থেকে রেফারেন্স না দিয়ে কিছু বলার অর্থ অনেক সময়ই মিথ্যাচারে পরিণত হয়।

এজন্যই মহানবী সা.ও তার হাদীসের মাঝে সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ করেছেন,

عن أبي هريرة رضي اللّه
عنه أن النبيّ صلى اللّه عليه وسلم قال: ” كَفَى بالمَرْءِ كَذِباً أنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ ما سَمِعَ ”
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী সা. বলেছেন “মানুষের মিথ্যা বলার জন্য এতোটুকুই যথেষ্ট যে, সে কিছু শুনবে আর যাচাই-বাছাই না করেই তা অপরের কাছে বর্ণনা করবে।” (সহীহ মুসলিম, প্রথম খন্ড হাদীস নং ৮)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ

অর্থ: “হে ঈমানদ্বার গণ! তোমরা কেবলমাত্র ধারণাপ্রসূত ও অনুমান নির্ভর বিষয় হতে বেঁচে থাকো। কেননা, অধিকাংশ ধারণা ও অনুমানই পরিশেষে গুনাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।” (সূরা হুজুরাত, আয়াত: ০৬)

ড. জাকির নায়েকের ব্যাপারে সমালোচকদের বক্তব্য কথা-বার্তায় দেখা যাচ্ছে যে, আসলে তারা অনেকেই ড. জাকির নায়েক সম্পর্কে অনেক ক্ষেত্রেই না জেনে, ধারণা প্রসূত এবং তৃতীয় কারো বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে মন্তব্য করেছেন এবং অবশ্যই গুনাহগার হচ্ছেন। ড. জাকির নায়েকের ব্যাপারে আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি সমালোচনাকারী হযরত মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী সাহেব তার ‘জাকির নায়েকের আসল চেহারা বইতে স্পষ্টভাবে এটা স্বীকার করেও নিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, “আমি তার কোন অনুষ্ঠানও দেখতে যাই না, কোনো বই পুস্তকও পড়তে চাই না।” (জাকির নায়েকের আসল চেহারা, পৃষ্ঠা নং ১৮)
“জাকির নায়েক নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ বা মন্তব্যের কথা কখনো কি তার সঙ্গে শেয়ার করেছেন????
কখনো যোগাযোগ করার ভাবনা আছে???”

এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, “তিনি একজন আলেম, একথা আমার কাছে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম অথবা ইসলামী শিক্ষা সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা বা মতবিনিময়ের জন্য তার সঙ্গে আমার যোগাযোগের কোনো প্রশ্নই আসে না।”
(জাকির নায়েকের আসল চেহারা, পৃষ্ঠা নং ১৯)

একই বইয়ের ২৩ পৃষ্ঠায় তিনি এটাও স্বীকার করেছেন যে, কেবলমাত্র তৃতীয় পক্ষের থেকে ‘শোনা’ কথার উপর ভিত্তি করেই তিনি সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি যেহেতু তার বইও পড়িনা, প্রোগ্রামও দেখিনা, তাই এগুলো যারা পড়েন বা দেখেন তাদের বাচনিকের ভিত্তিতেই আমার মন্তব্য করতে হবে।”

এই যদি হয় একজন শীর্ষ আলেমের পক্ষ থেকে কারো ব্যাপারে সমালোচনার ভিত্তি, তাহলে কি অবস্থা আমাদের, ভাবতে খুবই কষ্ট লাগে।
এছাড়াও ড. জাকির নায়েকের ব্যাপারে আমাদের দেশের যারা সমালোচনা করেছেন তারা যে সকল বিষয়ে সমালোচনা করেছেন তার অধিকাংশই জাকির নায়েক কখন কোথায় বলেছেন তার কোন উদ্ধৃতি নেই। অনেক ক্ষেত্রে জাকির নায়েকের ব্যাপারে এমন কথা বলা হয়েছে যা আসলে জাকির নায়েক বলেন নি। আবার অনেক ক্ষেত্রে জাকির নায়েকের একটি দীর্ঘ একটি আলোচনার মাঝখান থেকে বিচ্ছিন্নভাবে অস্পষ্ট করে উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে যার মাধ্যমে আসলে জাকির নায়েকের মুল বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে। অনেক সমালোচনা করা হয়েছে অযৌক্তিকভাবে কেবলমাত্র ধারণার উপর ভিত্তি করে। আর বাকি অধিকাংশ ইখতিলাফ তথা মতবিরোধপূর্ণ মাসআলার ক্ষেত্রে ক্ষেত্রেই ড. জাকির নায়েক কর্তৃক কুরআন ও হাদীসের রেফারেন্স দিয়ে বিভিন্ন মত উল্লেখ শেষে তার মধ্যে একটিকে প্রাধান্য দেয়ার বিষয়টিকে বলা হয়েছে মনগড়া ব্যখ্যা বা কুরআন-হাদীসের অপব্যখ্যা।

Leave a comment