প্রশ্নোত্তর January 2010

picsart_10-20-09-04-42

প্রশ্নোত্তর January 2010
________________________________

দারুল ইফতা
হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

প্রশ্ন (১/১২১)ঃ সূরা মায়েদার ১৫নং আয়াতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে নূর বলা হয়েছে কি? তিনি কি নূরের তৈরী ছিলেন? দলীল ভিত্তিক জানিয়ে বাধিত করবেন।

-আনীসুর রহমান

বেড়াবাড়ী, মোহনপুর, রাজশাহী।

উত্তরঃ তিনি নূরের তৈরী ছিলেন না; বরং তিনি মাটির মানুষ ছিলেন। সূরা মায়েদার ১৫নং আয়াতের শেষাংশের অনুবাদ হচ্ছে ‘তোমাদের কাছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জ্বল গ্রন্থ’। এ আয়াতে نُوْرٌ (নূর)-এর ব্যাখ্যা স্বরূপ এসেছে وَكِتَابٌ مُبِيْنٌ (একটি সমুজ্জ্বল গ্রন্থ)। এখানে وَكِتَابٌ مُبِيْنٌ বাক্যাংশ نُوْرٌ -এর উপরে ‘আত্ফ’ হয়েছে। যাকে ‘আত্ফে খাছ আলাল আম’ বলে। অতএব এখানে ‘নূর’ বলে ‘কিতাব’ বুঝানো হয়েছে। সুতরাং আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট নূর এসেছে, অর্থ হ’ল সমুজ্জ্বল স্পষ্ট গ্রন্থ এসেছে (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ, ফৎওয়া নং ৫৭৮২)। আল্লাহ বলেন, (হে রাসূল!) ‘আপনি বলুন, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার নিকট এ মর্মে প্রত্যাদেশ করা হয় যে, তোমাদের উপাস্য এক ও একক’ (কাহফ ১১০)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আপনি বলুন, আমার প্রতিপালক মহা পবিত্র। আমি একজন মানুষ ও একজন রাসূল বৈ আর কী?(বানী ইসরাঈল ৯৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজেও বলেন, ‘আমি তো একজন মানুষ। আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই। সুতরাং আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিবে’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১০১৬ ‘সিজদায়ে সহো’ অনুচ্ছেদ)।

প্রশ্ন (২/১২২)ঃ আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে যে, সিজার করে বাচ্চা প্রসব করালে, টিউমার কিংবা অন্য কোন রোগের কারণে কোন মহিলার পেটে অস্ত্রোপচার করা হ’লে এবং এ ধরনের মহিলা মৃত্যুবরণ করলে তাদের নিকটে যাওয়া বা স্পর্শ করা যাবে না। এমনকি ঐ মহিলা কারো মা হ’লেও সন্তান তাকে ম্পর্শ করতে পারবে না। এটা কতটুকু সঠিক?

-মেহেরুন নেসা

বায়া, পবা, রাজশাহী।

উত্তরঃ মানুষ একান্ত বাধ্য হয়েই অপারেশন বা অস্ত্রোপচার করিয়ে থাকে। সুতরাং কোন রোগের জন্য কিংবা সন্তান প্রসবকালে  জটিলতার  কারণে  অপারেশন  করালে  এবং এজন্য মৃত্যুবরণ করলে ঐ মহিলার কাছে যাওয়া বা ধরা-ছোঁয়া যাবে না মর্মে প্রশ্নোল্লেখিত বক্তব্য সঠিক নয়।

প্রশ্ন (৩/১২৩)ঃ যেনা কত প্রকার ও কি কি? ব্যভিচারীর শাস্তি কি? ব্যভিচারীর তওবা কবুল হয় কি?

-আব্দুল আলীম

শরতা, পাঁচবিবি, জয়পুরহাট।

উত্তরঃ যিনা বিভিন্ন প্রকার হ’তে পারে। নিজের স্ত্রী বা দাসী ব্যতীত অন্য মহিলার সাথে জৈবিক চাহিদা পূরণ করাকে যৌনাঙ্গের যিনা বলে। এছাড়া চোখের যেনা হচ্ছে মাহরাম ব্যতীত অন্য মহিলার দিকে কামনার দৃষ্টি নিক্ষেপ করা। মুখের বা জিহবার যেনা হচ্ছে কামভাবে কথা বলা (বুখারী, ফাতহুল বারী হা/৬২৪৩, ১১/৩০)। অবিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত এবং বিবাহিতের শাস্তি হচ্ছে রজম (কোমর পর্যন্ত পুতে পাথর মেরে হত্যা) (ইবনু মাজাহ হা/২৫৫০; ইরওয়া হা/২৩৪১)। উল্লেখ্য, দেশের শাসক বা তার প্রতিনিধিই কেবল এ শাস্তি কার্যকর করতে পারেন (ফাতাওয়া লাজনা দায়িমাহ, ২২/৩৫)। যেনা-ব্যভিচার কবীরা গোনাহ। তওবা ব্যতীত এ গোনাহ মাফ হয় না। ব্যভিচারী ব্যক্তি ঐ গর্হিত কর্ম থেকে ফিরে আসার জন্য অনুতপ্ত হয়ে খালেছ অন্তরে তওবা করলে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ (তওবা ৯/৮২; ফুরক্বান ৬৮-৭০)।

প্রশ্ন (৪/১২৪)ঃ বাড়ীতে অবস্থানকালে অধিকাংশ সময় যদি মহিলাদের মাথায় কাপড় না থাকে তাহ’লে পাপ হবে কি?

-আসমা

জামতৈল, সিরাজগঞ্জ।

উত্তরঃ মহিলাদের জন্য পুরুষ থেকে পর্দা করা ফরয (নূর ৩১)। বাড়ী যদি চারিদিকে পর্দাঘেরা হয় এবং সেখানে বেগানা পুরষ না থাকে কিংবা তারা যথেচ্ছ যাতায়াত না করে, তাহ’লে মাথা খোলা থাকলে কোন অসুবিধা নেই এবং এজন্য গোনাহ হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভাগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত বাদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে’ (নূর ৩১)।

প্রশ্ন (৫/১২৫)ঃ ছহীহ বুখারীতে ‘যাকাতুল ফিতর’ ঈদের ছালাতের পূর্বে বণ্টন করার কথা রয়েছে। কিন্তু মাসিক আত-তাহরীকে ছালাতের পরে বন্টন করাকে সুন্নাত বলা হয়েছে। এমতাবস্থায় কোন্টি সঠিক? দলীল ভিত্তিক জানিয়ে বাধিত করবেন।

-মুহাম্মাদ আব্দুল আউয়াল

নয়াপাড়া, ভাওয়াল মির্জাপুর, গাযীপুর।

উত্তরঃ ছহীহ বুখারীতে নাফে‘-এর সূত্রে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে ঈদের ছালাতের পূর্বে ছাদাকাতুল ফিতর আদায় করার কথা এসেছে (বুখারী, হা/১৫১১ ‘যাকাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ৭৭)। কিন্তু পরবর্তী অনুচ্ছেদে নাফে‘ (রাঃ) ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে ছাদাক্বাতুল ফিতর সংক্রান্ত আরেকটি হাদীছ বর্ণনার পর বলেন, وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يُعْطِيْهَا الَّذِيْنَ يَقْبِلُوْنَهَا-‘ইবনু ওমর (রাঃ) ছাদাক্বাতুল ফিতর জমাকারীদের নিকট ফিতরা প্রদান করতেন’ (ঐ, হা/১৫১২; ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী, ৩/৪৭৯ পৃঃ)। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, كَانُوْا يُعْطُوْنَ لِلْجَمْعِ لاَ لِلْفُقَرَاءِ ‘তাঁরা জমা করার জন্য দিতেন, ফকীরদের জন্য নয়’। ছহীহ ইবনু খুযায়মাতে আব্দুল ওয়ারেছের সূত্রে আইয়ূব থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল ইবনু ওমর (রাঃ) ছাদাক্বাতুল ফিতর কখন প্রদান করতেন? তিনি বললেন, আদায়কারী বসলে। তিনি আবার বললেন, আদায়কারী কখন বসতেন? তিনি বললেন, ঈদের ছালাতের একদিন বা দু’দিন পূর্বে (ফাৎহুল বারী, ৩/৪৮০ পৃঃ)। ইমাম মালিক (রহঃ) নাফে‘ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, أَنَّ عَبْدَ اللهِ ابْنِ عُمَرَ كَانَ يَبْعَثُ بِزَكَاةِ الْفِطْرِ إِلَى الَّذِيْ تُجْمَعُ عِنْدَهُ قَبْلَ الْفِطْرِ بِيَوْمَيْنِ أَوْ ثَلاَثَةٍ- ‘আব্দুল্লাহ ইবন ওমর (রাঃ) ঈদুল ফিতরের দু’দিন বা তিনদিন পূর্বে যাদের নিকট ছাদাক্বাতুল ফিতর জমা করা হয় তাদের নিকট ফিতরা প্রেরণ করতেন’ (মুওয়াত্ত্বা মালিক, ১/২৮৫ পৃঃ ‘যাকাত’ অধ্যায় ‘যাকাতুল ফিতর প্রেরণ’ অনুচ্ছেদ)। তেমনি আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, وَكَّلَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ ‘রাসূলুল্লাহ আমাকে রামাযানের যাকাত রক্ষার বা হেফাযতের দায়িত্ব প্রদান করেন’(ফাৎহুল বারী, ৩/৪৮০ পৃঃ)। যা দ্বারা বুঝা যায় যে, তিনি জমাকৃত ছাদাক্বাতুল ফিতর পাহারা দিচ্ছিলেন। সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, ঈদের পূর্বে ছাদাক্বাতুল ফিতর জমা করা সুন্নাত। তাছাড়া ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে ঈদের ছালাতের পূর্বে ছাদাক্বাতুল ফিতর বের করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তা ছালাতের পূর্বে বের করতাম এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাত শেষে তা বণ্টন করতেন’(ইরওয়াউল গালীল, ৩/৩৩২-৩৩ পৃঃ)। অতএব ছাদাক্বাতুল ফিতর ঈদের পূর্বে জমা করতে হবে এবং ঈদের ছালাতের পরে বণ্টন করতে হবে। এটাই সুন্নাতী তরীকা (বিস্তারিত দ্রঃ ফাৎহুল বারী, হা/১৫১১ ‘যাকাত’ অধ্যায় ৭৭ অনুচ্ছেদ, ৩/৪৩৯-৪০ পৃঃ)।

প্রশ্ন (৬/১২৬)ঃ ফজরের আযানে الصلوة خير من النوم বলতে হবে কি? দলীল ভিত্তিক জানিয়ে বাধিত করবেন।

-রফীক আহমাদ

বিরামপুর, দিনাজপুর।

উত্তরঃ আবূ মাহযূরাহ্ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে আযানের নিয়ম শিখিয়ে দিন। … তিনি তাকে আযানের শব্দগুলো শিখিয়ে দেন এবং বলেন, যদি সকালের ছালাত হয় তাহ’লে তুমি বলবে, ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান্ নাঊম, আছ-ছালাতু খাইরুম মিনান্ নাঊম’… (আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৬৪৫, ছহীহ আবূদাঊদ হা/৫০০)। আলোচ্য হাদীছে সকালের ছালাত (صلاة الصبح) দ্বারা যে ফজরের ফরয ছালাতের আযানই হবে, তা খুব সহজেই বুঝা যায়। তাছাড়া তাহাজ্জুদের ছালাতকে কোন হাদীছেই সকালের ছালাত বলা হয়নি। সে কারণ আবূ মাহযূরাহ্ হ’তে বর্ণিত যে হাদীছে বলা হয়েছে প্রথম আযানের কথা সে আযান দ্বারা ফজরের ছালাতের আযানকেই বুঝতে হবে। কারণ ইক্বামতকে অন্য হাদীছে দ্বিতীয় আযান হিসাবে উল্লে­খ করা হয়েছে। এছাড়া ‘প্রথম আযান’ দ্বারা যে ফজরের ছালাতের আযানকে বুঝানো হয়েছে তা স্পষ্ট হয়েছে আবূ মাহ্যূরাহ হ’তে বর্ণিত আরেকটি হাদীছ দ্বারা, যাতে বলা হয়েছে, আবূ মাহ্যূরাহ ফজরের আযানে ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিন… বলেছেন (ছহীহ আবূদাঊদ হা/৫০৪)।

ছহীহ বুখারী এবং মুসলিমে বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন ছালাত উপস্থিত (অর্থাৎ ছালাতের সময়) হয়ে যাবে তখন তোমাদের কেউ যেন আযান দেয়’। অতএব ছালাতের সময় হ’লে যখন ফজরের ফরয ছালাতের জন্য আযান দেয়া হবে তখনই ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাউম’ বলতে হবে। আর ফজরের ওয়াক্তের পূর্বের আযান ছালাতের সময় হয়ে যাওয়ার সাথে সম্পৃক্ত নয়। অতএব যেহেতু সে আযান ছালাতের সাথে সম্পৃক্ত নয় সেহেতু ঐ আযানে ‘আছ-ছালাতু খায়রুম …’ বলার কোন প্রশ্নই আসে না।

আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন, মুওয়ায্যিন যখন ফজরের আযানে হাইয়া ‘আলাল ফালাহ্ বলবে তখন (এর পরেই) বলবে, ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান …’(বায়হাক্বী)। অতএব যে হাদীছে বলা হয়েছে ‘প্রথম ফজরের আযানে’ এর দ্বারা ফজরের ফরয ছালাতের প্রথম আযান বুঝতে হবে। আর ইক্বামত হচ্ছে দ্বিতীয় আযান।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহ’লে ফজরের ফরয ছালাতের পূর্বের আযানটি কি জন্য দেয়া হয়? এক হাদীছে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, বেলাল রাতে (রাত থাকতেই) আযান দেয় তোমাদের ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগানোর জন্য ও ক্বিয়ামকারীকে (তাহাজ্জুদের ছালাত আদায়কারীদেরকে) ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে (ছহীহ নাসাঈ হা/৬৪১)। অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘বেলাল রাতে আযান দেয়। অতএব তোমরা খানাপিনা অব্যাহত রাখো যে পর্যন্ত ইবনু উম্মে মাকতূম আযান না দেয়’ (বুখারী ‘আযান’ অধ্যায় হা/৬২৩)। বেলালের আযান যে সাহরী খাওয়ার জন্য তা এ দু’হাদীছ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। অতএব যে আযান ফজরের ছালাতের জন্য হবে সে আযানেই ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাউম’ বলতে হবে। এটাই সুন্নাত।

প্রশ্ন (৭/১২৭)ঃ আমরা জানি যে, গোসলের স্থলাভিষিক্ত তায়াম্মুম (মায়েদা ৫/৬)। কিন্তু আত-তাহরীকে দেখলাম, গোসল না করতে পারলে ওযূ করে ছালাত আদায় করলে চলবে। এক্ষণে প্রশ্ন হ’ল গোসল করতে অক্ষম ব্যক্তিকে তায়াম্মুম করতে হবে না-কি ওযূ করলে চলবে? দলীল ভিত্তিক জানিয়ে বাধিত করবেন।

-শহীদুল ইসলাম

সুরিটোলা মাদরাসা, ঢাকা।

উত্তরঃ কোন শরী‘আত সম্মত কারণে গোসল করতে অপারগ হ’লে অথবা গোসল করার মত পানি না থাকলে যদি ওযূ করার সমান পানি থাকে তাহ’লে ওযূই করবে। আর যদি মোটেও পানি না থাকে তাহ’লে শুধু তায়াম্মুম করবে। আয়াতের বিধানটি পানি না থাকার ক্ষেত্রে। আর আয়াতে শুধুমাত্র গোসলের পানি না পেলেই তায়াম্মুম করতে হবে এটা বুঝায়নি। বরং ওযূর পানি না থাকলেও তায়াম্মুম করবে এ বিধানকেও সম্পৃক্ত করেছে। আয়াতে বলা হয়েছে ‘তোমরা যদি পানি না পাও’। অতএব গোসলের পানি না থাকলে যদি ওযূর পানি থাকে তাহ’লে ওযূ করবে। ফলে তাহরীকের ফৎওয়া ও আয়াতের মধ্যে কোন  বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়নি।

প্রশ্ন (৮/১২৮)ঃ মাগরিবের ছালাতের অল্প সময় পূর্বে মসজিদে উপস্থিত হয়ে সমবেত মুছল্ল­ীদের উপবিষ্ট দেখা যায়। এমতাবস্থায় কি দু’রাক‘আত ছালাত পড়ে বসতে হবে, না দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করতে হবে?

হাসীবুল হাসান

ভবানীপুর, বাঁশদহা, সাতক্ষীরা।

উত্তরঃ এ সময় দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার সুযোগ থাকলে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে বসবেন। যদি ছালাত আদায় করার সুযোগ না থাকে তাহ’লে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবেন। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দু’রাক‘আত ছালাত আদায় না করে বসতে নিষেধ করেছেন (বুখারী, ‘কিতাবুছ ছালাত’ হা/৪৪৪, ‘কিতাবুল জুম‘আ’ হা/১১৬৭; মুসলিম হা/৭১৪; ছহীহ তিরমিযী হা/৩১৬)। এছাড়া মাগরিবের ফরযের পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার কথা ছহীহ হাদীছে এসেছে (বুখারী ‘কিতাবুল জুম‘আ’ হা/১১৮৩; ছহীহ আবূদাঊদ হা/১২৮১)।

প্রশ্ন (৯/১২৯)ঃ জুম‘আর দিনে সুস্থ-সবল ইমামকে লাঠি ভর দিয়ে খুৎবা প্রদান করতে দেখা যায়। এর রহস্য কি?

আবুল আকরাম

নরদাশ, বাগমারা, রাজশাহী।

উত্তরঃ বিষয়টি সুস্থ-সবল আর বৃদ্ধ হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত নয়। বিষয়টি শরী‘আতের সাথে সম্পৃক্ত। লাঠি নিয়ে খুৎবা দেয়া সুন্নাত (ছহীহ আবূদাঊদ হা/১০৯৬, হাদীছটিকে ইবনু হাজার ও শায়খ আলবানী হাসান বলেছেন এবং ইবনুস সাকান ও ইবনু খুযায়মাহ ছহীহ বলেছেন)।

প্রশ্ন (১০/১৩০)ঃ কাদিয়ানীদের সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে কি? কেউ তাদের সাথে সম্পর্ক রাখলে তার পরিণাম কি হবে?

মুতীউর রহমান

নওয়াপাড়া, খলীলপুর, বীরভূম

পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

উত্তরঃ কাদিয়ানীরা যেহেতু নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে সর্বশেষ নবী হিসাবে স্বীকার করে না, সেহেতু তারা মুসলিম নয়, কাফির। কাফিরদের সাথে যেমন সম্পর্ক রাখা যায় না, অনুরূপভাবে তাদের সাথেও সম্পর্ক গড়া যাবে না (নিসা ৪/১৪৪, মায়েদা ৫/৫১, ৫৭)। যে তাদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে (আহমাদ, আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭)। তবে কাফিরদের সাথে  সাধারণভাবে সামাজিক সম্পর্ক থাকতে পারে।

প্রশ্ন (১১/১৩১)ঃ জুম‘আর খুৎবা কয়টি? হানাফী মসজিদে খুৎবার আযানের পূর্বে বাংলায় দীর্ঘ সময় বয়ান করতে দেখা যায়। অতঃপর খুৎবার আযানের পরে আরবীতে ২টি খুৎবা পাঠ করা হয়। এতে খুৎবা তিনটি হয়ে যায়। এটা কতটুকু হাদীছ সম্মত? দলীল ভিত্তিক জানিয়ে বাধিত করবেন।

অধ্যাপক ছফিউদ্দীন আহমাদ

পাঁচদোনা, নরসিংদী।

উত্তরঃ জুম‘আর খুৎবা দু’টি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন এবং মাঝে বসতেন। অতঃপর বসা থেকে উঠে দ্বিতীয় খুৎবা দিতেন (বুখারী ‘কিতাবুল জুম‘আ’ হা/৯২৮; মুসলিম ‘জুম‘আ’ হা/৮৬১; আবূদাঊদ হা/১০৯২)। খুৎবার পূর্বে বয়ান করার সমর্থনে কোন হাদীছ নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে, ছাহাবীগণের যুগে, তাবেঈ ও তাবা তাবেঈগণের যুগেও এরূপ করা হ’ত না। খুৎবার উদ্দেশ্য হচ্ছে উপস্থিত শ্রোতাদের লক্ষ্য করে সমসাময়িক অথবা প্রয়োজনীয় বিষয়ে তারা যে ভাষায় বুঝবে সে ভাষায় বুঝিয়ে বলা। তবে প্রথমে আল্ল­াহর প্রশংসা এবং তাঁর নবীর প্রতি ছালাত ও সালাম পাঠ করতে হবে।

প্রশ্ন (১২/১৩২)ঃ মৃতব্যক্তি কিংবা মুমূর্ষু ব্যক্তির শয্যাপার্শ্বে বসে কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে কি? দলীল ভিত্তিক জানিয়ে বাধিত করবেন।

-ইসমাঈল

বাঁকাল মাদরাসা, সাতক্ষীরা।

উত্তরঃ মৃত ব্যক্তির নিকট কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে এ মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি। রোগী যদি এরূপ অবস্থায় থাকেন যে, তিনি কুরআন শুনতে চাচ্ছেন। তাহ’লে তার নিকট কুরআন পাঠ করলে তিনি এর দ্বারা উপকৃত হবেন। আর যদি তার জ্ঞানই না থাকে, তাহ’লে তার নিকটে কুরআন পাঠ করা যাবে না এবং জ্ঞান থেকেও যদি পাঠ করতে না বলেন তাহ’লেও পাঠ করা যাবে না। কারণ এরূপ অবস্থায় উপকার করার মানসিকতা নিয়ে পাঠ করতে গিয়ে বিরাট ধরনের অপকার হয়ে যেতে পারে। কারণ রোগী বিরক্ত হ’তে পারে। এমনকি বলে ফেলতে পারে যে, আমি এসব কিছুই বিশ্বাস করি না। [নাঊযুবিল্ল­াহি মিন যালিক]। অতএব যদি শুনতে চায় ও পাঠ করতে বলে তাহ’লেই পাঠ করা যাবে।

প্রশ্ন (১৩/১৩৩)ঃ কোন্ কোন্ দিন ছিয়াম পালন করা নিষেধ? সোমবার ও বৃহষ্পতিবার ছিয়াম পালনের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ দিন পড়ে গেলে করণীয় কি?

-আব্দুছ ছামাদ

মুহাম্মাদপুর, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া।

উত্তরঃ কোন ফরয ছিয়ামের দিন পড়ে না গেলে নফল হিসাবে নির্দিষ্ট করে শুধুমাত্র জুম‘আর দিবসে ছিয়াম রাখা যাবে না (ছহীহ আবূদাঊদ হা/২৪২১; ছহীহ তিরমিযী হা/৭৪৪)। তবে জুম‘আর দিনের আগে অথবা পরে মিলিয়ে যদি রাখা হয় তাহ’লে দোষ নেই(বুখারী ‘কিতাবুছ ছাওম হা/১৯৮৫; মুসলিম হা/১১৪৪)। ঈদের দিন ছিয়াম পালন করা নিষিদ্ধ (ছহীহ আবূদাঊদ হা/২৪১৬; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/১৭২২)। যিলহজ্জ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখেও ছিয়াম রাখতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করেছেন (ছহীহ আবূদাঊদ হা/২৪১৮)। চাঁদ উঠেছে কি উঠেনি এরূপ সন্দেহের দিনেও ছিয়াম রাখা যাবে না (ছহীহ আবূদাঊদ হা/২৩৩৪; ছহীহ তিরমিযী হা/৬৮৬)। সোম অথবা বৃহস্পতিবারে নিষিদ্ধ দিন পড়ে গেলে সেদিন ছিয়াম রাখা যাবে না।

প্রশ্ন (১৪/১৩৪)ঃ হিন্দুদের সালাম দেয়া যাবে কি? দলীল ভিত্তিক জানিয়ে বাধিত করবেন।

-মুহাম্মাদ আলী

রাজশাহী কলেজ, রাজশাজহী।

উত্তরঃ কোন অমুসলিম যদি সালাম দেয় তাহ’লে তার উত্তরে শুধুমাত্র ‘ওয়া‘আলায়কা’ অথবা ‘ওয়া‘আলায়কুম’ বলতে হবে (বুখারী ‘কিতাবুল ইসতিযান’ হা/৬২৫৭, ‘কিতাবু ইসতিতাবাতুল মুরতাদ্দীন’ হা/৬৯২৮; মুসলিম হা/২১৬৪; ছহীহ আবূদাঊদ হা/৫২০৬; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩৬৯৭)।

প্রশ্ন (১৫/১৩৫)ঃ স্বামী-স্ত্রীর  রক্তের  গ্রুপ  একই  হ’লে সন্তান জন্মের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব পড়ে কি? এরূপ হ’লে নাকি সন্তান জন্মের সম্ভাবনা কম থাকে কিংবা সন্তান বিকলাঙ্গ হ’তে পারে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

-মুহাম্মাদ মুনীরুয্যামান

রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী।

উত্তরঃ প্রশ্নোল্লেখিত বক্তব্য সঠিক নয়। কেননা রক্ত মানুষের ভাল মন্দ করার কোন ক্ষমতা রাখে না। এটি সম্পূর্ণ আল্লাহর এখতিয়ারে।

প্রশ্ন (১৬/১৩৬)ঃ জন্মনিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে অস্ত্রোপচার করানো ব্যক্তির ইমামতিতে ছালাত আদায় হবে কি?

-শাহ মুয্যাম্মিল হক

জয়সারা, আত্রাই, নওগাঁ।

উত্তরঃ জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য অস্ত্রোপচার করানো গুনাহের কাজ। কিন্তু এ গুনাহের কারণে কেউ অমুসলিম হয় না। অতএব প্রশ্নে উল্লে­খিত ব্যক্তি যেহেতু একজন মুসলিম সেহেতু তার পিছনে ছালাত আদায় করলে ছালাত হয়ে যাবে। কিন্তু যদি অধিকাংশ মুছল্লী  শরী‘আত সম্মত কোন কারণে কোন ইমামের পিছনে ছালাত আদায় করতে না চাওয়া সত্ত্বেও তিনি ইমামতি করেন তাহ’লে ইমামের ছালাতে সমস্যা হবে মুছল্ল­ীদের নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তিন শ্রেণীর মানুষের ছালাত কবুল হয় না … (তাদের একজন হচ্ছে) সেই ইমাম লোকেরা যাকে অপসন্দ করা সত্ত্বেও সে ইমামতি করে’ (আবূদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১১২৩ ‘ইমারত’ অনুচ্ছেদ; ছহীহ তিরমিযী হা/৩৬০)।

প্রশ্ন (১৭/১৩৭)ঃ তাহাজ্জুদ ছালাত আলোতে না অন্ধকারে পড়া উত্তম?

-ফরীদা বেগম

পশ্চিম মাতাপুর, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট।

উত্তরঃ তাহাজ্জুদ ছালাত আলোতে বা অন্ধকারে যে কোন অবস্থায় আদায় করা যায়। তবে কারো যদি অন্ধকারে তাহাজ্জুদের ছালাত আদায় করার মধ্যে আল্লাহ্ভীতি বেশী আসে তাহ’লে তার জন্য অন্ধকারে ছালাত আদায় করাই উত্তম। কিন্তু হাদীছে আলো ও অন্ধকারের মধ্যে পার্থক্য করা হয়নি।

প্রশ্ন (১৮/১৩৮)ঃ দুগ্ধপানকারী ছেলে শিশুর প্রস্রাবে কেবল পানির ছিটা দিয়ে ছালাত আদায় করা যায়। কিন্তু মেয়ে শিশুর বেলায় প্রস্রাবের স্থান পানি দিয়ে ধৌত না করলে পবিত্র হয় না এর কারণ কি?

-সৈয়দ ফায়েয

ধামতী মিরবাড়ী, দেবিদ্বার, কুমিল্ল­া।

উত্তরঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মেয়ে শিশুর বেলায় এরূপ করতে বলেছেন। এজন্য ধৌত না করলে পবিত্র হয় না। কারণ কি তা জানা যাক বা না যাক রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরূপ করতে বলেছেন তাই করতে হবে। প্রত্যেক মুসলিমের আক্বীদাহ এরূপই হওয়া উচিত। তবে ইসলাম ধর্মের কোন কিছুই আল্ল­াহ তা‘আলা কারণ ছাড়া চাপিয়ে দেননি। ইমাম শাফেঈকে এই প্রশ্ন করা হ’লে উত্তরে তিনি বলেন, ছেলে শিশুর পেশাব পানি এবং মাটি হ’তে তৈরি হয় আর মেয়ে শিশুর পেশাব গোশত এবং রক্ত থেকে তৈরি হয়। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আল্লাহ আদমকে মাটি ও পানি দিয়ে সৃষ্টি করেন। আর হাওয়াকে সৃষ্টি করেন আদমের বাঁকা পাজর থেকে। ফলে ছেলের পেশাব হয় পানি ও মাটি থেকে এবং মেয়ের পেশাব হয় গোশত ও রক্ত থেকে’ (ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৫২৫)।

প্রশ্ন (১৯/১৩৯)ঃ অনেক মসজিদে দেখা যায়, মুছল্লীরা মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে কিছু সময় বসেন। অতঃপর উঠে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করেন। অথচ আমরা জানি যে, মসজিদে ঢুকে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় না করে বসা যায় না। কোন্টা সঠিক?

-তরীকুল ইসলাম

বর্ষাপাড়া, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ।

উত্তরঃ বসার পূর্বে দু’রাক‘আত তাহিয়াতুল মাসজিদ আদায় না করে বসা সুন্নাত বিরোধী কাজ। এরূপ যারা করেন তারা সুন্নাত বিরোধী আমল করেন। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দু’রাক‘আত ছালাত আদায় না করে বসতে নিষেধ করেছেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৭০৪)।

প্রশ্ন (২০/১৪০)ঃ  ব্যবসায়ের মূলনীতি কি? দলীলভিত্তিক জানিয়ে বাধিত করবেন।

-মুহাম্মাদ মুনীরুল আলম

বায়া মেডিকেল সেন্টার, রাজশাহী।

উত্তরঃ আল্লাহ ব্যবসা-বাণিজ্যকে হালাল এবং সূদকে হারাম করেছেন (বাক্বারাহ ২৭৫)। ব্যবসা-বাণিজ্যের কয়েকটি মূলনীতি হচ্ছে- (১) সূদ না থাকা। কেননা তা হারাম(বাক্বারাহ ২৭৮-৭৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূদ গ্রহীতা, সূদ দাতা, সূদের লেখক ও তার সাক্ষীদ্বয়কে অভিসম্পাত করেছেন। তিনি বলেন, তারা সবাই সমান অপরাধী (মুসলিম ৩/১২১৯ পৃঃ)। (২) মাপে কম না দেয়া ও ওযনে বেশী না নেওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম করে। যারা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণ মাত্রায় নেয়। আর যখন লোকদেরকে মেপে দেয় কিংবা ওযন করে দেয়, তখন কম দেয়’ (আত-তাতফীফ ১-৩)। (৩) ধোঁকা না দেওয়া। একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বাজারের মধ্যে এক খাদ্য স্তূপের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্তূপের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলে তার মধ্যে আর্দ্রতা পেলেন। তিনি বিক্রেতাকে বললেন, হে খাদ্য বিক্রেতা! কি ব্যাপার? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এতে বৃষ্টির পানি লেগেছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি তা স্তূপের উপরিভাগে রাখলে না কেন? তাহ’লে লোকে দেখতে পেত। জেনে রেখ, যে প্রতারণা করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’ (মুসলিম ১/৯৯পৃঃ)। (৪) পণ্যের দোষ গোপন না করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। কোন মুসলমানের জন্য তার ভাইয়ের নিকট ত্রুটিপূর্ণ পণ্য বিক্রয় করা বৈধ নয়। তবে যদি সে তা বলে বিক্রয় করে, তবে তা বৈধ হবে (ইবনু মাজাহ ২/৭৫৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭০৫)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যদি তারা দু’জন (ক্রেতা-বিক্রেতা) মিথ্যা বলে ও পণ্য বা মুদ্রার দোষ গোপন করে, তবে তাদের কেনা-বেচার বরকত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে’ (বুখারী, ফাতহুল বারী ৪/৩২৮পৃঃ)। (৫) দালালী না করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্রেতার ভান করে তোমরা পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিও না’ (বুখারী, ফাতহুল বারী ১০/৪৮৪)।

প্রশ্ন (২১/১৪১)ঃ জাহান্নামের কাজ-কর্মে ১৯ জন ফেরেশতা রয়েছেন। তাদের ৭০ হাযার ডান হাত ও ৭০ হাযার বাম হাত রয়েছে। প্রত্যেক হাতে ৭০ হাযার তালু আছে, প্রত্যেক তালুতে ৭০ হাযার আঙ্গুল আছে। প্রত্যেক আঙ্গুলের মাঝে ৭০ হাযার অজগর সাপ আছে। প্রত্যেক সাপের মুখে একটি করে দেশী সাপ আছে। আর দেশী সাপের দৈর্ঘ্য ৫০০ বছরের রাস্তা। প্রত্যেক সাপের মুখে ১টি করে বিচ্ছু আছে। ঐ বিচ্ছু একবার কামড় দিলে ৭০ বছর জ্ঞান থাকবে না। এ হাদীছটি কি ছহীহ?

-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

সিরাজগঞ্জ।

উত্তরঃ এটি কোন হাদীছ নয়।

প্রশ্ন (২২/১৪২)ঃ সহো সিজদার সঠিক পদ্ধতি কি?

-সুজন

গেরানী, এথেন্স, গ্রীস।

উত্তরঃ রাক‘আত কম হ’লে বা বেশী হ’লে অথবা কত রাক‘আত হয়েছে তা নির্ণয় করতে না পারলে কিংবা তাশাহহুদ ছুটে গেলে সহো সিজদা দিতে হবে। রাক‘আত কম হ’লে পূর্ণ করার পর তাশাহহুদের বৈঠক শেষ করে দু’টি সিজদা দিতে হবে। রাক‘আত বেশী হ’লে সালাম ফিরানোর পরে হোক অথবা আগে হোক দু’টি সিজদা দিয়ে সালাম ফিরতে হবে। তাশাহ্হুদ ছুটে গেলে সিজদা দেয়ার পর সালাম ফিরতে হবে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১০১৪, ১০১৫, ১০১৭, ১০১৮)। তবে ডাইনে একটি সালাম দিয়ে সিজদায়ে সহো করার প্রচলিত প্রথার কোন ভিত্তি নেই। অমনিভাবে সিজদায়ে সহো করার পরে তাশাহহুদ পড়ারও কোন ছহীহ হাদীছ নেই (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃঃ ৮৪)।

প্রশ্ন (২৩/১৪৩)ঃ রামাযানে দিনের বেলায় স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে জোরপূর্বক সহবাস করে তাহ’লে এজন্য স্ত্রীর গোনাহ হবে কি? এক্ষেত্রে স্ত্রীর করণীয় কি?

-আব্দুস সাত্তার

অলহরী, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।

উত্তরঃ রামাযানের ছিয়াম পালন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরয (বাক্বারাহ ১৮৩)। সুতরাং স্বামী যদি ছিয়াম পালনকারী স্ত্রীর সাথে জোর পূর্বক সহবাস করে তাহ’লে সে গোনাহগার হবে। এক্ষেত্রে স্ত্রী দায়ী হবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মতের ভুলবশতঃ ও বাধ্যগত অবস্থায় কৃত  অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছেন’ (ইবনু মাজাহ হা/২০৪৫)। এমতাবস্থায় স্বামীকে উক্ত ছিয়ামের ক্বাযা ও কাফফারা দু’টিই আদায় করতে হবে। আর স্ত্রীকে কেবল উক্ত ছিয়ামের ক্বাযা আদায় করতে হবে(ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫৩৪ পৃঃ)। এরূপ ছিয়াম ভঙ্গের কাফফারা হচ্ছে একজন ক্রীতদাস মুক্ত করা। কিংবা দু’মাস একাধারে ছিয়াম পালন অথবা ৬০ জন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়ানো।

প্রশ্ন (২৪/১৪৪)ঃ আমরা জানি শিরক বড় গুনাহ। এই শিরকের গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করবেন কি?

-আযীযুল ইসলাম

গন্ধর্ববাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা।

উত্তরঃ শিরক একটি অমার্জনীয় পাপ (নিসা ৪/৪৮) যাকে আল্লাহ মহা যুলুম বা অন্যায় বলে আখ্যায়িত করেছেন (লোক্বমান ১৩)। তবে সে প্রকৃতপক্ষে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে শিরক থেকে ফিরে আসলে এবং আমলে ছালেহ করলে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। আল্লাহ বলেন, ‘তবে যারা তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যে তওবা করে ও সৎকর্ম করে, সে ফিরে আসার স্থান আল্লাহর দিকে ফিরে আসে’ (ফুরক্বান ৭০-৭১)।

প্রশ্ন (২৫/১৪৫)ঃ মুস্তাহাব গোসলের নিয়ম কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

-লাবীবুর রহমান

হয়বৎপুর, পার্ববর্তীপুর, দিনাজপুর।

উত্তরঃ মুস্তাহাব ও সাধারণ গোসলের সময় প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে সমস্ত দেহে পানি ঢালবে কিংবা পুকুর, খাল, নদীতে গোসলের ক্ষেত্রে ডুব দিবে। উল্লেখ্য যে, নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য পর্দার মধ্যে গোসল করা আবশ্যক (আবূদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৭)।

প্রশ্ন (২৬/১৪৬)ঃ মসজিদের মেহরাব সংলগ্ন দু’পাশের দেয়ালে দৃষ্টি সীমার মধ্যে কা‘বা এবং মসজিদে নববীর টাইল্স লাগানো যাবে কি?

-শাহীনুর রহমান

বাঁশদহা, সাতক্ষীরা।

উত্তরঃ মুছল্লীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় এমন কিছু মসজিদের দেয়ালে বা মেহরাবে লাগানো যাবে না। ছালাতের সময় এগুলি চোখে পড়লে ছালাতের একাগ্রতা নষ্ট হয়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এমন একটি চাদরে ছালাত আদায় করেন যাতে বুটা ছিল। তিনি তার বুটার দিকে একবার নযর করলেন। তিনি ছালাত শেষে বললেন, আমার এ চাদরটি এর প্রদানকারী আবু জাহমের নিকট নিয়ে যাও এবং আমার জন্য তার ‘আম্বেজানীয়া’ চাদর নিয়ে আস। কেননা এখনই এ চাদর আমার ছালাতের একাগ্রতা নষ্ট করল (বুখারী, মুসিলম, মিশকাত হা/৭০১)। আনাস (রাঃ) বলেন, আয়েশা (রাঃ)-এর একটি পর্দা ছিল, যা দ্বারা তিনি ঘরের একদিক ঢেকে রেখেছিলেন। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তোমার এ পর্দা সরিয়ে ফেল। কারণ তার ছবি সমূহ আমার ছালাতের মাঝে আমার চোখে পড়ে (বুখারী মিশকাত হা/৭০২)।

প্রশ্ন (২৭/১৪৭)ঃ মৃত ব্যক্তিকে গোসলের পূর্বে ৭টি মাটির ঢেলার মাধ্যমে পায়খানার দ্বার মুছে নেয়ার পর পানি দ্বারা গোসল করাতে হয়। একথা কি ঠিক?

-ছাদরুল ইসলাম

মেলান্দী, গোছা, মোহনপুর, রাজশাহী।

উত্তরঃ একথা ঠিক নয়। মৃতব্যক্তিকে গোসল করানোর নিয়ম হচ্ছে ওযূ করানো পর গোসল দেয়া (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৬৩৪)। কাজেই গোসলের পূর্বে ওযূ ছাড়া অন্য কিছুই করা উচিত নয়।

প্রশ্ন (২৮/১৪৮)ঃ যিলহজ্জ মাসের ১ তারিখ হতে ১০ই যিলহজ্জ পর্যন্ত ছিয়াম রাখা যায় কি?

-ইদরীস

বাঁশদহা, সাতক্ষীরা।

উত্তরঃ যিলহজ্জের প্রথম হ’তে নবম তারিখ পর্যন্ত ছিয়াম পালন করা যায়। হাফছা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) আশুরার ছিয়াম, যিলহজ্জের ১ম দশকের ছিয়াম, প্রতি মাসে তিন দিনের ছিয়াম এবং ফজরের পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত ছাড়তেন না (নাসাঈ হা/২৪১৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জনৈকা স্ত্রী বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যিলহজ্জের নয়টি ছিয়াম, আশুরার ছিয়াম এবং প্রতি মাসে তিনটি ছিয়াম পালন করতেন (নাসাঈ হা/২৪১৭, ২৩৭২; আবূদাঊদ হা/২১০৬)। তবে আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে যিলহজ্জের ১ম দশকে ছিয়াম পালন করতে দেখিনি। এক্ষণে উভয় হাদীছের সমন্বয় এটাই হ’তে পারে যে, এটি নফল ছিয়াম। অতএব রাখা যেতে পারে।

প্রশ্ন (২৯/১৪৯)ঃ যিলহজ্জ মাসে যে তাকবীর বলার কথা এসেছে তার নির্দিষ্ট সময় জানিয়ে বাধিত করবেন।

-আশরাফুল ইসলাম

কলারোয়া, সাতক্ষীরা।

উত্তরঃ এ ব্যাপারে সবচেয়ে উত্তম হ’ল আরাফার দিন সকাল হ’তে মিনায় অবস্থানের শেষ দিন আছর পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করা। তবে যিলহজ্জের প্রথম দিন হ’তে কুরবানীর পরের তিন দিন পর্যন্ত তাকবীর বলা যায় (মির‘আত ৫/৯০ পৃঃ)। আলী (রাঃ) আরাফার দিন ফজরের পর থেকে ঈদের পরের তিন দিনের শেষ দিন আছর পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন(ইরওয়া ৩/১২৫ পৃঃ)। তবে ঈদুল ফিতরের দিন ফজর হ’তে ঈদের ছালাত পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করার প্রমাণ পাওয়া যায় (ইরওয়াউল গালীল হা/৬৫০)।

প্রশ্ন (৩০/১৫০)ঃ যিলহজ্জ মাসে আইয়ামে বীযের নফল ছিয়াম পালন করা যাবে কি?

-আব্দুর রহমান

বাঁশদহা, সাতক্ষীরা।

উত্তরঃ আইয়ামে বীয-এর ছিয়াম পালনকারী ব্যক্তিগণ যিলহজ্জ মাসে ২দিন ছিয়াম পালন করবেন। কারণ প্রতি মাসে দু’টি ছিয়ামও পালন করা যায়। নবী করীম (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি প্রতি মাসে একদিন ছিয়াম পালন কর। লোকটি বলল, আমি এর চেয়ে বেশী পারব। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি প্রতি মাসে দু’দিন ছিয়াম পালন কর। লোকটি বলল, আমি এর চেয়ে বেশী পারব। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি প্রতি মাসে তিনদিন ছিয়াম পালন কর (নাসাঈ হা/২৪৩৪, ২৩৯৪)। তবে যিলহাজ্জের ১৪, ১৫, ১৬ও রাখতে পারেন (আবুদাঊদ হা/২৪৫৩)।

প্রশ্ন (৩১/১৫১)ঃ গর্ভবতী মহিলা নফল ছিয়াম পালন করতে পারে কি?

-জেসমিন

মুহাম্মাদপুর, ঢাকা।

উত্তরঃ গর্ভবতী মহিলার জন্য নফল ছিয়াম না রাখাই ভাল। কারণ ফরয ছিয়ামের ব্যাপারে তাকে ছাড় দেয়া হয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা মুসাফিরকে ছিয়াম পালনের ব্যাপারে ছাড় দিয়েছেন এবং ছালাত অর্ধেক করে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও বাচ্চাকে দুধ পানকারিণী মহিলাকে ছিয়াম পালন করার ব্যাপারে ছাড় দিয়েছেন (নাসাঈ হা/২২৭৪, ২২৭৫)। গর্ভবতী ও দুগ্ধপানকারিণী মহিলা বাচ্চার ক্ষতির আশংকা করলে ছিয়াম ছেড়ে দিয়ে তার ফিদইয়া স্বরূপ অন্যকে খাদ্য খাওয়াবেন (আবুদাঊদ হা/২৩১৮)।

প্রশ্ন (৩২/১৫২)ঃ জুম‘আর দিন নফল ছিয়াম পালনে শারঈ কোন বিধি-নিষেধ আছে কি?

-মোবারক

ধামরাই, ঢাকা।

উত্তরঃ নির্দিষ্ট করে কেবল জুম‘আর দিন ছিয়াম পালন করা যাবে না। তার সাথে আগে অথবা পরে একদিন যোগ করে ছিয়াম রাখতে হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের কোন ব্যক্তি যেন শুধু জুম‘আর দিন নির্দিষ্ট করে ছিয়াম পালন না করে। তবে তার একদিন আগে অথবা একদিন পরে রাখলে জুম‘আর দিন রাখা যাবে(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২০৫১ ‘নফল ছিয়াম’ অনুচ্ছেদ; আবূদাঊদ হা/২৪২০)।

প্রশ্ন (৩৩/১৫৩)ঃ ছালাতে দাঁড়ানোর সময় দু’জনের মাঝে ফাঁকা রেখে দাঁড়ালে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে কি?

-আবু তালিব

কিশোরপুর, দূর্গাপুর, রাজশাহী।

উত্তরঃ ছালাতে দাঁড়ানোর সময় সীসাঢালা প্রাচীরের মত একে অপরের সাথে মিলে দাঁড়াতে হবে। মধ্যে ফাঁকা রাখলে শয়তান প্রবেশ করে এবং মুছল্লী রহমত হ’তে বঞ্চিত হয়। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা কাতার সোজা করবে, বাহু সমূহ সমপর্যায়ে রাখবে, ফাঁকা সমূহ বন্ধ করবে এবং তোমাদের ভাইদের সাথে নরম হয়ে থাকবে। মধ্যখানে শয়তানের জন্য ফাঁক রাখবে না। যে ব্যক্তি কাতারকে মিলিয়ে দাঁড়ায়, আল্লাহ তাকে স্বীয় রহমতের সাথে মিলান। আর যে ব্যক্তি কাতারে ফাঁকা রাখে আল্লাহ তাকে স্বীয় রহমত হ’তে পৃথক রাখেন (আবূদাঊদ, মিশকাত হা/১১০২)। অন্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি শয়তানকে কাতার সমূহের ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করতে দেখছি, যেন সে কালো ছাগলের বাচ্চা। কাজেই তোমরা প্রাচীরের মত কাতার মিলিয়ে দাড়াও (নাসাঈ হা/৮১৫; আবূদাঊদ হা/৬৭৩)। অন্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁকা বন্ধ করবে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন (ইবনু মাজাহ হা/৯৯৫, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৯২, ২৫৩২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁকা বন্ধ করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৮৯২)। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘যখন বান্দা কাতার মিলিয়ে দাঁড়ায় আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন আর ফেরেশতা তার উপর নেকী ছিটিয়ে দেন(সিলসিলা ছাহীহাহ হা/৪৫১৬ পৃঃ ১৮৯২ নং হাদীছের অধীনে)। অন্য বর্ণনায় আছে যারা কাতার মিলিয়ে দাঁড়ায় আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করেন, আর ফেরেশতাগণ তাদের জন্য ক্ষমা চান (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/২৫৩২)। অন্য বর্ণনায় আছে যারা কাতারের ফাঁকা বন্ধ করতে যায় তাদের পদক্ষেপে সবচেয়ে বেশী নেকী হয় (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/২৫৩৩)।

প্রশ্ন (৩৪/১৫৪)ঃ পূজা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন পূজা মন্ডপে সরকারীভাবে চাউল বিতরণ এবং এককালীন অনুদান প্রদান করা যায় কি?

-নাজমুল হাসান

বাঁশদহা বাজার, সাতক্ষীরা।

উত্তরঃ প্রত্যেক অমুসলিম মুসলমানের কাছে পূর্ণ সদাচরণ পাওয়ার হক রাখে। তবে তারা তাদের পূজার কোন সুযোগ-সুবিধা মুসলমানের কাছে পাওয়ার অধিকার রাখে না। কারণ পূজার সবকিছুই শিরকী কাজ, যা সবচেয়ে বড় গোনাহ। আর শিরক হ’ল সবচেয়ে বড় পাপ। আর পাপের সহযোগিতা করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন (মায়েদা ৫/২)।

প্রশ্ন (৩৫/১৫৫)ঃ উছূলে হাদীছের নীতিমালার আলোকে ছালাতুত তাসবীহ সংক্রান্ত হাদীছগুলি সার্বিকভাবে বিবেচনা করলে বিভিন্ন সনদের আলোকে তা সবলতার পর্যায়ে পৌঁছে, বিধায় হাদীছগুলি আমলযোগ্য বলে মনে হয়। বিষয়টির ব্যাখ্যা জানতে চাই।

-জাহাঙ্গীর আলম

পাথরঘাটা, ঝাউডাঙ্গা, সাতক্ষীরা।

উত্তরঃ ছালাতুত তাসবীহ সম্পর্কে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি। বরং কেউ এ সম্পর্কিত ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছকে ‘মুরসাল’, কেউ ‘মওকূফ’, কেউ ‘যঈফ’, কেউ ‘মওযূ’ বা জাল বলেছেন। যদিও শায়খ আলবানী (রহঃ) উক্ত হাদীছের যঈফ সূত্র সমূহ পরষ্পরকে শক্তিশালী করে মনে করে তাকে স্বীয় ছহীহ আবূদাঊদে (হা/১১৫২) সংকলন করেছেন এবং ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) ‘হাসান’ স্তরে উন্নীত বলেছেন। তবুও এরূপ বিতর্কিত, সন্দেহযুক্ত ও দুর্বল ভিত্তির উপরে কোন ইবাদত বিশেষ করে ছালাত প্রতিষ্ঠা করা যায় না। বিধায় ‘দারুল ইফতা’ বিষয়টি থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে (দ্রঃ ইবনু হাজার আসক্বালানীর বিস্তারিত আলোচনা; আলবানী, মিশকাত পরিশিষ্ট, ৩ নং হাদীছ ৩/১৭৭৯-৮২ পৃঃ; আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৩২৮ হাশিয়া; বায়হাক্বী ৩/৫২; আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ, মাসায়েলু ইমাম আহমাদ, মাসআলা নং ৪১৩, ৩/২৯৫ পৃঃ)।

প্রশ্ন (৩৬/১৫৬)ঃ কথিত আছে এক ইহুদী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মিরাজকে অস্বীকার করে। একদা সে মাছ ক্রয় করে স্ত্রীকে কুটা-বাছার জন্য বলে নদীতে গোসল করতে যায়। গোসলের জন্য নদীতে ডুব দিলে স্ত্রীলোকে পরিণত হয়। তারপর তার অন্যত্র বিবাহ হয় এবং তিনটি সন্তান হয়। কোন একদিন আবার গোসল করতে এসে নদীতে ডুব দিলে পুরুষ হয়ে যায়। সে বাড়ীতে ফিরে এসে দেখে তার স্ত্রী মাছ কুটা-বাছা তখনও করছে। সে বলে আমি তিন সন্তানের মা হয়ে আসলাম আর তুমি এখনও মাছ কুটা-বাছাই শেষ করনি। এ ঘটনা কি সত্য?

-আহমাদুল্লাহ

গোবরচাকা, খুলনা।

উত্তরঃ এ ঘটনা সত্য নয়। প্রকাশ থাকে যে, মানুষ পাপের কারণে নারীতে পরিণত হয় না। তবে শুকর বানরে পরিণত হ’তে পারে (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৬০৪/২৬৯৯; আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৫১৯৯; বুখারী, ইবনু মাজাহ হা/৪০২০)।

প্রশ্ন (৩৭/১৫৭)ঃ মহিলাদের ফরয ছালাতে ইক্বামত দিতে হবে কি?

-খাদীজা খাতুন

পাঁচাবাধ, জয়পুরহাট।

উত্তরঃ মহিলাদের ফরয ছালাতে ইক্বামত দিতে হবে। কারণ ইক্বামত একটি যিকির। আয়েশা (রাঃ) আযান দিতেন, ইক্বামত দিতেন এবং মহিলাদের ইমামতি করতেন, তিনি তাদের মাঝে দাঁড়াতেন (বায়হাক্বী, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৪)। মহিলাদের আযান ইক্বামত দিতে হবে না মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (তামামুল মিন্নাহ ১৫৩ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৪)।

প্রশ্ন (৩৮/১৫৮)ঃ মুসাফির ব্যক্তি বাড়ী ফেরার সময় যোহর-আছর জমা ও কছর করতে পারে কি?

-গুলযার আলী

ফরক্কাবাদ, দিনাজপুর।

উত্তরঃ মুসাফির বাড়ী পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত মুসাফির থাকে। তাই সে যোহর-আছর জমা কছর ও করতে পারে (আবূদাঊদ হা/১২০৮; তিরমিযী ৫৫৩)। তবে বাড়ী পৌঁছে গেলে পূর্ণ ছালাত আদায় করতে হবে। কারণ সে তখন আর মুসাফির থাকে না।

প্রশ্ন (৩৯/১৫৯)ঃ ক্বাযা ছালাতের সুন্নাত আদায় করতে হবে কি?

-মুহাম্মাদ আলী

ফরক্কাবাদ, দিনাজপুর।

উত্তরঃ ক্বাযা ছালাতের সুন্নাত আদায় করা ভাল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফজরের ক্বাযা সুন্নাত আদায় করেন। একদা তিনি (ছাঃ) ঘুমিয়ে যান। তিনি সূর্য উঠার পর ফজরের ছালাত আদায় করেন। প্রথমে সুন্নাত পড়েন ও পরে ফরয পড়েন (মুসলিম হা/৪৭৩; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/..)।

প্রশ্ন (৪০/১৬০)ঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, জুম‘আর খুৎবা সংক্ষিপ্ত হবে আর ছালাত দীর্ঘ হবে। অথচ আমাদের দেশে সব মসজিদেই এ হাদীছের বিপরীত আমল দেখা যায়। বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানতে চাই।

-শহীদুল ইসলাম

বর্ষাপাড়া, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ।

উত্তরঃ জুম‘আর খুৎবা সংক্ষিপ্ত হবে আর ছালাত দীর্ঘ হবে-এর অর্থ হ’ল, খুৎবা তার মান অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত ও সারগর্ভ হবে। আর ছালাতকে তার সুন্নাত অনুযায়ী দীর্ঘ করতে হবে(বিস্তারিত দেখুন মির‘আত ৪/৪৯৬ পৃঃ)। অত্র হাদীছটির ব্যাখ্যা অন্য হাদীছ দ্বারা সুস্পষ্টরূপে বুঝা যায় যে, ছালাত হবে মধ্যম এবং খুৎবা হবে মধ্যম (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৫)। তবে খুৎবা দীর্ঘ করা সম্পর্কেও হাদীছ এসেছে (মুসলিম হা/২৮৯২ ‘ফিতান’ অধ্যায় ৬ অনুচ্ছেদ; মির‘আত ৪/৪৯৬)।

Leave a comment